Breaking News >> News >> Daily Nayadiganta


সংসদ পুনর্বহালের নির্দেশ পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের


Link [2022-04-07 21:19:45]



পাকিস্তানের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে যে সিদ্ধান্ত দেশটির ডেপুটি স্পিকার দিয়েছিলেন, তা বাতিল করে দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আহ্বানে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাও আর টিকছে না। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ জাতীয় পরিষদ পুনরুজ্জীবিত করে শনিবার আস্থা ভোট করার নির্দেশ দিয়েছে।দিনভর নাটকীয়তার পর বহুল প্রত্যাশিত এই রায় ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই রায় দেন। রায়ে বলা হয় আগামী শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন বসবে এবং ওই অধিবেশনেই ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ডেপুটি স্পিকার গত ৩ এপ্রিল অনাস্থা ভোটকে খারিজ করে দেন। কিন্তু তার এই ঘোষণা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো। মূলত স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এই রায় হওয়ার কথা থাকলেও তা এক ঘণ্টা দেরি হয়। রায় উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয় দাঙ্গা পুলিশ।রায় প্রদানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজাকে তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনি আইনি দলকে সাথে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেন। রায় ঘোষণার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রধান রাজনীতিবিদরা। ছিলেন পিএমএল-এন দলের শেহবাজ শরিফ এবং পিপিপি নেতা বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি।এর আগে, বিকেলে পঞ্চম দিনের মতো আলোচিত এ মামলার শুনানি শুরু হয়। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে এতে অংশ নেন বিচারপতি মুনীব আখতার, বিচারপতি আইজাজুল আহসান, বিচারপতি মাজহার আলম ও বিচারপতি জামাল খান মন্দোখেল।শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটি স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির গত ৩ এপ্রিলের রুলিং ভুল ছিল। তিনি বলেন, মূল প্রশ্ন হলো, সামনে কী ঘটবে। এখন কিভাবে এগোতে হবে সে বিষয়ে পিএমএল-এন কৌঁসুলি ও পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান আদালতকে নির্দেশনা দেবেন। আমাদের জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে।রায় ঘোষণাকালে পাকিস্তানি পার্লামেন্টের স্পিকার আসাদ কায়সারকে আগামী শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট।বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে সর্বসম্মতভাবে এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ের পরপরই আদালত চত্বরে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে শুরু করেন।রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগেই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। টেলিভিশনের ফুটেজে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। রায় উপলক্ষে আদালতে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়।গত রোববার ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে সেটি খারিজ করে দেন স্পিকার। এরপর প্রেসিডেন্টের কাছে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তার প্রস্তাবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডেপুটি স্পিকার অসাংবিধানিকভাবে অনাস্থা ভোট বাতিল করেছেন। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি নোটিশ জারি করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে গত ৮ মার্চ ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকারের প্রতি লিখিত আবেদন জানায় তারা। ইমরান খান তখনো আত্মবিশ্বাসী, তিনি বিরোধীদের উল্টো এক হাত দেখে নেয়ার কথা জানান। বলেন, অনাস্থা ভোটে বিরোধীরা হেরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত কি না! পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর স্পিকারকে ১৪ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় রাজধানী ইসলামাবাদে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুই দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকের জন্য সেই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়। এরপর ২৫ মার্চ শুক্রবার আবারো অধিবেশন ডাকা হলেও সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন ছাড়াই ২৮ তারিখ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার। ২৮ তারিখের অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ। সংবিধান অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের পর তিন দিন পার হলেই ভোটাভুটি করা যায়। তবে ভোটাভুটির জন্য সাত দিনের বেশি সময় নেয়া যাবে না। ২৮ তারিখ প্রস্তাব উত্থাপনের পর আবারো ৩১ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপর সর্বশেষ এ নিয়ে ৩ এপ্রিল ভোটাভুটির তারিখ নির্ধারিত হয়।অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রথম থেকেই ইমরান খানকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল বিরোধীরা। তাদের পক্ষে ছিল ১৬২ আইনপ্রণেতাও। যদিও ইমরানকে সরাতে প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোটের। তবে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর হঠাৎ করেই ইমরানের দল পিটিআইর ২৪ এমপি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। তারা ইমরান খানের পক্ষত্যাগের ঘোষণা দেয়। এতে প্রচণ্ড চাপে পড়ে যান ইমরান। বিরোধীদের আত্মবিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসে ইমরানের বিপদ তত বাড়তে থাকে। একদম শেষ মুহূর্তে সরকারি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট। তারা তাদের পাঁচ আসন নিয়ে বিরোধীদের দলে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্য দিয়ে ইমরান খানের অনাস্থা ভোটে হারা সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।



Most Read

2024-09-19 15:44:02