Breaking News >> News >> Daily Nayadiganta


অধিগ্রহণের কবলে পড়তে যাচ্ছে ঐতিহাসিক স্থান জনমনে শঙ্কা


Link [2022-03-15 23:19:37]



সম্প্রীতির এক অন্যরকম দৃষ্টান্ত গড়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ের মহামুনি এলাকায়। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে একসাথেই গড়ে উঠেছে তিনটি সম্প্রদায়ের কবর-শ্মশান এবং গোরস্থান। দেশের আর কোথাও সম্প্রীতির এমন দৃষ্টান্ত নেই। তবে রামগড় স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে সড়ক প্রশস্ত করার জন্য প্রাথমিকভাবে জমি অধিগ্রহণের জন্য যে মাপ নেয়া হয়েছে সেখানে এই ঐতিহ্যবাহী পবিত্র জায়গায় পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি এই পবিত্র স্থানকে অক্ষত রেখে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হোক। জানা যায়, তিন সম্প্রদায়ের (মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ) মৃতদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুসারে করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একই সমাজে নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করলেও মৃত্যুর পর তাদের জন্য আলাদা আলাদা সমাধির ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এখানে সব ধর্মের মানুষের মাঝে সৌহার্দ্যরে দৃষ্টান্ত হিসেবেই এই সমাধিস্থলটি গড়ে উঠেছে।স্থানটি রামগড় পৌরসভার মহামুনি এলাকার বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমল থেকে ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে সাম্প্রতিক বন্ধনের অন্যরকম এক দৃষ্টান্ত এটি।সরেজমিনে মহামুনি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানে চায়ের দোকানগুলোতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান মিলেমিশে একাকার। সাম্প্রদায়িকতার কোনো নজির নেই। একসাথে কয়েকজন বাঙালি আড্ডা দিচ্ছিলেন একজন উপজাতি নারীর দোকানে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুসলমানদের ঈদে যেমন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের দাওয়াত থাকে, তেমনি বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের পূজা কিংবা বড়দিনেও নিমন্ত্রণ থাকে অন্যদের। দোকানে আড্ডারত অবস্থায় কথা হয় আরিফ রহমান নামে একজনের সাথে। তিনি জানান, কাজের সূত্রে তিনি এ এলাকায় ২০ বছর ধরে থাকেন। এ এলাকায় কখনো ছোটখাটো ঝগড়াও তার চোখে পড়েনি।খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সুমন হালদার জনি বলেন, স্থানীয় যুগ যুগ ধরে এখানে মুসলমান-খ্রিষ্টানদের দাফন ও বৌদ্ধ-হিন্দুদের সৎকার করা হচ্ছে। এ নিয়ে কখনো কোনো বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্মের নিয়মনীতি মেনে দাফন ও সৎকার করে আসছে। এখানে কোনো মতপার্থক্য নেই। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন নজির দেশের আর কোথাও নেই। একসাথে তিন সম্প্রদায়ের কবন-শ্মশান, গোরস্থান একমাত্র রামগড়ই অবস্থিত। তার অনেক আত্মীয়স্বজনকে এ জায়গায় সমাহিত করা হয়েছে। এই স্থানকে অক্ষত রেখে সড়ক প্রশস্তকরণের দাবি জানান তিনি। মহামুনি কবরস্থান কমিটির সদস্য নুরুল আনোয়ার বলেন, কবর ও শ্মশান পাশাপাশি অবস্থিত। পূর্ব পুরুষরা সম্প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ পাশাপাশি এই কবরস্থান, শ্মশান ঘাট করে গেছেন। সড়ক প্রশস্তকরণে এ ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে শুনে মন খারাপ হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের লোকজন আন্তরিক হলে এ ভূমি অক্ষত রেখে সড়ক নির্মাণ করা যাবে।রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ পবিত্র কবর, সমাধি, শশ্মানগুলো। সাম্প্রদায়িক বন্ধন আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। তিনি আরো জানান, তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বন্দর কমিটিকে অনুরোধ করে এই পবিত্র ভূমি অক্ষত রেখে সড়ক নির্মাণ করতে।রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল জানান, ঐতিহাসিক একটি স্থান এটি। পুরো দেশে এমন একটি স্থান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। জাত ও ধর্মের বিভেদ ভুলে সাম্প্রদায়িকতার এমন নজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় এ গ্রামে কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে ত্রিপুরা, কে বৌদ্ধ আর কে খ্রিষ্টান সে পরিচয় মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠেনি তাদের মাঝে। তারা এটি বিশ্বাস করে, পৃথিবীতে একজন মানুষ যে ধর্মেরই হোক বা সমাজের যে অবস্থানে থাকুক না কেন, মৃত্যুকে আপন করে নিতেই হবে। তিনি আরো জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের এই দাবি যুক্তিসঙ্গত। তাদের দাবিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ঐতিহাসিক স্থানকে অক্ষত রাখতে তিনি স্থানীয়দের পাশে থাকবেন।



Most Read

2024-09-20 14:28:08