Breaking News >> News >> Daily Nayadiganta


মৃত লাশের সাথে প্রতারণা ও প্রবাসী ওয়েজ আর্নাস বোর্ডের ভোগান্তি


Link [2022-03-15 23:19:37]



মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনব পন্থায় প্রতারণার খবর পাওয়া যায়। এমনকি তারা প্রবাসে মারা যাওয়া লাশের সাথেও প্রতারণা করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা ও অসহযোগিতার কারণে একদিকে যেমন লোকজন সরকার প্রদত্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে প্রতারকরাও সুযোগ পাচ্ছে প্রতারণা করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের প্রবাসীদের যেন হয়রানি না করার নির্দেশ দিলেও তাতে তেমন কোনো কাজ হয়নি।সপ্তাহখানেক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর এলাকার আ: কাইয়ুম হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কুয়ালালামপুরের এক হাসপাতালে। তার পরিবারের অবস্থা এতটাই শোচনীয়, লাশ দেশে আনার খরচ তো দূরের কথা, কফিন কেনারও ক্ষমতা নেই তাদের। মালয়েশিয়াস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে হাউমাউ করে কেঁদে কেটে সাংবাদিক ও প্রবাসী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেছেন অসহায় স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। দূতাবাসে যাওয়ার পর বলে দেয়া হয়েছে জেলা ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করার জন্য। তাদের কোনো ছেলে না থাকায় নিজেই দুই দিন অনেক কষ্ট করে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে জানতে পারেন ওয়েজ আনার্স বোর্ডের কোন শাখা এ জেলাতে নেই! এই অসহায়ত্বের মধ্যে আবার প্রতারণা ফাঁদ পাতেন আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি ০১৮৭৫৮৫৯০২৭ নাম্বার থেকে ফোন করে প্রবাসী কল্যাণ ওয়েজ আনার্স বোর্ডের উপসচিব পরিচয় দিয়ে মনোয়ারা বেগমকে বলেন, আপনার স্বামীর লাশ দেশে আনার জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়া হবে বোর্ডের পক্ষ থেকে। তবে তার আগে ফর্ম ফিলাপ খরচ তিন হাজার ৬০০ টাকা পাঠাতে হবে। তাহলে প্রাপ্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা সাথে সাথেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হবে।বিষয়টি সন্দেহ হলে এর সত্যতা যাচাই করার জন্য এ প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিবেদক ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক হামিদুর রহমানের সাথে দুই দিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি, পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মেসেজ দেয়া হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। এরপর বিএমইটির ডিরেক্টর জেনারেল মো: শহিদুল হকের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানানো হয়। তিনি সব ঘটনা শুনে বলেন, কাইয়ুমের লাশ দেশে আনার ব্যাপারে সম্ভব সব সহযোগিতা করবেন, আর প্রবাসীদের ভোগান্তি যাতে কম হয় সেজন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে উত্থাপন করা হবে। তিনি আরো জানান, এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার কোনো স্কিম সরকারের নেই। তাই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আ: কালাম আজাদ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি প্রতারক হতে পারে। কুয়ালালামপুর দূতাবাসের একজন সাবেক ফার্স্ট সেক্রেটারি নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, সরকার প্রবাসীদের প্রতি খুবই আন্তরিক। তাদের সুযোগ সুবিধার জন্য নানা রকম সুবিধা বরাদ্দ থাকে। তবে যারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকেন, তার সেগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করেন না। কারণ এটা প্রচার হলেই প্রবাসীরা দূতাবাসে ভিড় করবেন। কিন্তু তারা এত চাপ নিতে রাজি নন বলেই বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে চলেন। আবার অনেক চড়াই-উতরাই পার করে দেশে লাশ দাফনের পর ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের অনুদান পেতেও শুরু হয় নয়া যুদ্ধ। আখাউড়া উপজেলার বাসিন্দা মালয়েশিয়ায় মৃত ইমরান মিয়ার স্ত্রী জোসনা এবং একই এলাকার সৌদিতে মৃত আবু সায়েদ মিয়ার স্ত্রী পুতুল বেগম এ অভিযোগ করেন। এমনকি ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও বগুড়া সদরে সাইফুল ইসলাম জানেন না তার চাচা মালয়েশিয়া প্রবাসী জহিরের লাশের অনুদান কখন পাবেন। জহির মারা যাওয়ার পর তিন মাস হিমঘরে পড়ে থাকার পর তার মরদেহ প্রবাসীদের আর্থিক সহযোগিতায় দেশে আনা হয়েছে। গতকালও ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টরা শুধুই আশার বাণী শোনাচ্ছেন।



Most Read

2024-09-20 14:57:19