বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, পৃথিবীব্যাপী বামপন্থীদের উত্থানের সম্ভাবনা নতুন আকারে দেখা দিয়েছে। বামপন্থীদের সঙ্কট যেমন রয়েছে, আবার বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনার জায়গাটাও স্পষ্ট হচ্ছে। বিশ্বব্যবস্থা হিসেবে পুঁজিবাদের ব্যর্থতা আজ সবার সামনে উন্মোচিত। জনগণ বিকল্পের সন্ধান করছে। আমরা এই আলোচনা সভা থেকে আমাদের দেশের বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং শ্রীলঙ্কা থেকে যে অতিথিরা আমাদের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন, তাদের প্রতি আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় জনগণের লড়াইয়ে বামপন্থীদের নেতৃত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাসদের উদ্যোগে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় কমিউনিস্ট আন্দোলন : সঙ্কট, সম্ভবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, শ্রীলঙ্কার জনতাভিমুক্তি প্যারামুনা দলের পলিটব্যুরো সদস্য বিমল রতœায়েক, বাসদের সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবু সাইদ খান, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু। সভা পরিচালনা করেন বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন।খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য হলো জাতীয়ভাবে জাতীয় সমস্যা সঙ্কট নিয়ে বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এর মাধ্যমেই আমরা আমাদের পরস্পরের মতামতগুলোকে যাচাই-বাছাই করে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে পারব এবং এর পরে সেই লড়াইয়ের ভিত্তিতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়াতে একটি আন্দোলনের কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। এই ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আমরা দক্ষিণ এশিয়াকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণের নীলনকশাকে প্রতিহত করতে চাই।আনু মুহাম্মদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সমস্ত আন্দোলন, সমস্ত লড়াই আসলে চূড়ান্তরূপে বামপন্থীদের এজেন্ডা। সে যে নামেই দাঁড়াক। এটাই আমাদের এই অঞ্চলের সব থেকে বড় সম্ভাবনার জায়গা। এখন কর্তব্য হলো দক্ষিণ এশিয়ায় যেখানে যেখানে বামপন্থার শক্তি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, সেই অভিজ্ঞতার অর্জনগুলোকে সামনে তুলে ধরা এবং তাদের বিপর্যয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা বৃদ্ধি করা এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের ও বামপন্থী শক্তিগুলোর ঐক্য গড়ে তোলা।মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বিশ্ব ইতিহাসে কিছু পিভটাল পয়েন্ট বা কালের সন্ধিক্ষণ থাকে। সেইরকম একটা সন্ধিক্ষণ হয়ত আমরা পার করছি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য। সেই যুগ আর বেশি দূর নেই যেসময় এই অঞ্চলকে ঘিরে বিশ্ব বিপ্লবের নতুন উলম্ফন হবে। বিশ্বের সমস্ত শক্তি পুনর্বিন্যস্ত হচ্ছে। ক্রমাগত শক্তিগুলো আবার সমাজতন্ত্র অভিমুখী হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী অর্থনীতি ক্রমাগত পতনের দিকে। তাই বেঁচে থাকতে হলে তাদেরকে এখন প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে হবে।