Breaking News >> News >> Daily Nayadiganta


সঙ্কটের পথেই রাজনীতি


Link [2022-02-11 22:32:05]



সঙ্কটের পথেই এগোচ্ছে দেশের রাজনীতি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ধীরে ধীরে অতীতের মতোই তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক মতবিরোধ ও বিভাজন। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনকে কেন্দ্র করে এই বিরোধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাঠের বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের পুরো প্রক্রিয়া বর্জন করেছে। রাষ্ট্রপতির সংলাপে যেমন তারা যোগ দেয়নি, তেমনি সার্চ কমিটির কাছেও তারা ইসির জন্য কোনো নাম প্রস্তাব না করার কথা জানিয়ে দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুটি জোট ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টভুক্ত অধিকাংশ দলও নতুন ইসি গঠনের চলমান প্রক্রিয়াতে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিরোধী দলগুলো বলছে, সার্চ কমিটির সাথে যুক্ত সবাই আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত। এরা একদিকে যেমন কার্যকর ইসি গঠন করতে পারবে না, তেমনি সেই কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানও সম্ভব নয়। বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিকে সামনে এনেই মূলত নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের প্রথমটি বিএনপি বর্জন করেছে, শেষটিতে অংশ নিয়ে মাত্র ৭টি আসন লাভ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফল বিএনপি জোট বর্জন করলেও এর বিরুদ্ধে তারা মাঠে নামেনি। বছর খানেক ‘স্তম্ভিত’ অবস্থায় পার করার পর বিএনপি দল গোছানোর কাজে হাত দেয়। এরই মধ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার চতুর্থ বছরে পা দিয়েছে। বেজে উঠেছে আরেকটি নির্বাচনের ডামাডোল। আগামী বছরের শেষ নাগাদ হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচন ঘিরে রাজনীতি এখন জমতে শুরু করেছে। ২০১৩ সালে সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ার পর থেকেই নির্বাচন ঘিরে সঙ্কটের শুরু বলে অনেকে মনে করেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। দুটি নির্বাচনই বিরোধী দলগুলোকে দিয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ ও বিভিন্নমুখী তৎপরতা সত্ত্বেও দুটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে মেয়াদ পার করতে আওয়ামী সরকারের তেমন কোনো বেগ পোহাতে হয়নি। রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, এবার কী হবে? চলমান নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলোর জন্য ব্যাপক আশাবাদী হয়ে উঠার মতো কোনো ঘটনা এখনো লক্ষণীয় নয়। তবে আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কূটনৈতিক চাপ কিছুটা বেড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব ও এর ৭ সাবেক কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। জানা গেছে, ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সরকার নড়েচড়ে বসেছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে নানামুখী লবিং তদবির শুরু হয়েছে। যদিও এতে কোনো ফল হবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারবিরোধী রাজনীতিবিদদের ধারণা, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেটিই আগামী দিনে একটি বড় চাপ হিসেবে দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে না এগুলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। বিএনপি আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সমমনা সব দলগুলোকে সাথে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের দিকে ইতোমধ্যে পা বাড়িয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে তারা এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামতে চায়। খুব শিগগিরই দলটি জোট ও জোটের বাইরে থাকা আগ্রহী দলগুলোর সাথে বৈঠক করবে। এরপর তারা ক্রমান্বয়ে কর্মসূচি দিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করবে। একটা পর্যায়ে কর্মসূচি কঠোর রূপ নিতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেছেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। সরকারি দল অবশ্য বিএনপি জোটের আন্দোলনের হুমকিকে তেমন কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। গত দুটি জাতীয় নির্বাচন সাংবিধানিক যে পদ্ধতিতে হয়েছে, সরকার এর বাইরে আগামীতেও যেতে নারাজ।



Most Read

2024-09-20 20:50:23