Breaking News >> News >> Daily Nayadiganta


বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে


Link [2022-02-11 22:32:05]



সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ১০ বছর পরও মামলার তদন্ত শেষ করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যার ভয়ঙ্কর ও ব্যাপকভিত্তিক দায়মুক্তি চলছে।’গতকাল জেনেভা থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি নিজ বাসায় তাদের পাঁচ বছরের ছেলের সামনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এই দম্পতি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে দুর্নীতির ওপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করছিলেন, যা সম্প্রচারের অপেক্ষায় ছিল। আর এ কারণেই তাদের হত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে হয়েছে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়। হত্যার তদন্তের জন্য হাইকোর্ট ২০১২ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) দায়িত্ব দিয়েছে। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আদালত ৮৪ বার র্যাবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে। কিন্তু র্যাব তা এখনো দাখিল করতে পারেনি।জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা অপরাধের যখন বিচার হয় না, তখন তা গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিশ্চুপ করার জন্য তাদের ওপর হুমকি প্রদান, আক্রমণ করা এবং হত্যাকাণ্ড চালাতে অপরাধীদের আরো সাহসী করে তুলে। বাংলাদেশে এ ধরনের গভীর উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিবৃতিতে বলা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশে অন্তত ১৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নির্বিচারে আটক, আক্রমণ, অপহরণ, অনলাইন ও অফলাইনে হুমকি প্রদান এবং বিচার বিভাগীয় হয়রানির অসংখ্য প্রতিবেদন জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদের কাছে এসেছে। এ সব ঘটনা খুব কমই তদন্ত করা হয় বা বিচারের আওতায় আনা হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের আক্রমণের সাথে সরাসরি জড়িত থাকে বলে ধারণা করা হয়। এসব অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও অনেক ক্ষেত্রে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ২০১২ সালে সাগর-রুনি হত্যার পর জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার জবাব আসেনি।বিশেষজ্ঞরা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আব্দুল হাকিম শিমুলকে গুলি করে হত্যার বিচারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই হত্যার জন্য শাহজাদপুরের তৎকালীন মেয়রকে দায়ী করা হয়। মামলাটির ওপর বর্তমানে হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা (স্টে অর্ডার) আছে। আর আসামিরা সব জামিনে মুক্ত। এছাড়া করোনা মহামারী মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনায় করায় লেখক মুস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরপর ৯ মাস আটকাদেশের পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুস্তাক আহমেদ হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। বিবৃতিতের সাগর-রুনিসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের হত্যার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা এবং পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও কার্যকর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা।বিবৃতিদাতা জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার, মানবাধিকারকর্মীদের পরিস্থিতি সংক্রান্ত স্পেশাল রেপোর্টিয়ার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতি করার অধিকারবিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার, নির্যাতনসহ অন্যান্য নিষ্ঠুর ও অমানবিক শান্তিবিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাবিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার।আর্টিকেল ১৯-এর উদ্বেগ : সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির অমীমাংসিত হত্যা মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল-১৯। বিশ্বব্যাপী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা আর্টিকেল-১৯ এই মামলার তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আর্টিকেল-১৯ এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেছেন, এই অমীমাংসিত মামলাটি বিচারহীনতার সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ও লজ্জাজনক উদাহরণ, যেখানে খুনিরা মুক্তভাবে থাকতে পারে। এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই ঘটনা ইঙ্গিত করে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার বিচারে রাষ্ট্রব্যর্থ। এই হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি না হওয়াটা স্পষ্টতই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।



Most Read

2024-09-20 20:54:03