Breaking News >> News >> Daily Nayadiganta


বিদেশের মর্গে পড়ে আছে বাংলাদেশীর লাশ


Link [2022-02-04 23:43:25]



মধ্যেপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত এবং ওমানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতালের মরচুয়ারিতে মাসের পর মাস পড়ে আছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের লাশ। এসব হতভাগ্য প্রবাসীর লাশ আদৌ দেশে আসবে কি-না তা নিয়ে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। বিদেশের মর্গে পড়ে থাকা এমন অসংখ্য প্রবাসীর লাশ দ্রুত দেশে এনে দাফনের জন্য প্রতিনিয়ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে ধরনা দিচ্ছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। শুধু মন্ত্রণালয়ে নয়, তারা বিদেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে মর্গে পড়ে থাকা লাশ দেশে আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বজনদের দাবি, বিদেশে যেভাবেই মৃত্যু হোক তারা তাদের প্রিয় মানুষের লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৯ মার্চ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে সুনামগঞ্জ সদরের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের মোছা: হামিদা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার ছেলে মো: বাছির মিয়া ২০২১ সালের ১৮ মার্চ ওমানে ইন্তেকাল করেন। বর্তমানে দেশটির নেজুয়া হাসপাতালের মর্গে তার লাশ সংরক্ষিত আছে। ওই দেশে অবস্থানকারী মৃতের মামা মো: দিলোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। ওমান থেকে লাশ দেশে আনা হলে তার মামা মো: ফজলুল হক চৌধুরী সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করবেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই আবেদনের পর প্রবাসী বাছিরের লাশ দেশে আনার জন্য বিদেশে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে অনেক চেষ্টা করেও পরিবারের সদস্যরা লাশ আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ দিকে ছেলের লাশ দেশে আনতে না পারায় মা হামিদার খাওয়া-দাওয়া, ঘুম অনেকটাই হারাম হয়ে গেছে। ছেলের কথা মনে পড়লেই তিনি ডুকরে কেঁদে উঠছেন। তিনি স্বজনদের কাছে বলছেন, তোমরা আমার ছেলের লাশ আনার ব্যবস্থা করো। কিন্তু দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কেটে গেছে তবুও বাছিরের লাশ দেশে আসার কোনো খবর নেই। এভাবে কেটে গেছে প্রায় একটি বছর। শুধু বিদেশের মর্গে প্রবাসী বাছিরের লাশ যে পড়ে আছে তা কিন্তু নয়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমানো অনেক প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর পর তাদের লাশ বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল মর্গে মাসের পর মাস পড়ে আছে বলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও চেষ্টা করছেন, বিদেশের মর্গে পড়ে থাকা এসব লাশ তাদের স্বজনদের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার জন্য। কিন্তু নানা সময়ে নানা জটিলতার কারণে ওই লাশ দেশে পাঠানোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ওমানে মৃত্যুর পর একবছর ধরে হাসপাতাল মর্গের মরচুয়ারিতে লাশ হয়ে পড়ে থাকা মো: বাছিরের মামা মো: ফজলুল হক চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি বাছিরের মৃত্যুর বিষয়ে যতটুকু জানি তা হলো- ঘটনার দিন বাছির ওমানের নেজুয়া এলাকা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে পাশের বাজারে গিয়েছিল। ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। নেজুয়া এলাকায় আমাদের গ্রামের দিলোয়ার নামের একজন পরিচিত ব্যক্তি আছেন। আমরা তার সাথে যোগাযোগ করে বাছিরের লাশ দেশে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। পরে লোকজনের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান অফিসে লিখিতভাবে লাশ আনার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আবেদন করার ১০-১১ মাস হয়ে গেলো। এখনো লাশ দেশে আসার খবর নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাছির ওমানে অবৈধ শ্রমিক ছিল না। মানে প্রথমে যে মালিকের এখানে সে কাজ নিয়েছিল ওই মালিক তাকে ঠিকমতো বেতন দিতো না, শারীরিক নির্যাতন করতো। পরে সেখান থেকে পালিয়ে সে অন্য মালিকের কাছে চলে যায়। এ নিয়ে আগের মালিক ওমানে থাকা তার মামা দিলোয়ারকে ডেকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, বাছির তার এখানে কাজ করার সময় অনেক কিছু নিয়ে গেছে! তিনি বাছিরের মায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, পরিবার চায় তার লাশ দ্রুত দেশে আসুক।শুধু ওমানে নয়, সৌদি আরবের জেদ্দা, দাম্মাম, কুয়েত, জর্ডান, মালয়েশিয়া, দুবাই, আবুধাবিসহ বিশ্বের শ্রমবান্ধব দেশগুলোতে যেসব প্রবাসীসহ বাংলাদেশী মারা যাচ্ছে তাদের বেশির ভাগ লাশ ওই সব দেশের হাসপাতালের মরচুয়ারিতে পড়ে থাকছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রবাসে মারা যাওয়া লাশ প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফ্লাইটে দেশে আসছে। যে লাশগুলো দেশে আসছে তার প্রত্যেকটির পরিবহন খরচ বাবদ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ৩৫ হাজার টাকা নগদ নিহতের পরিবারের কাছে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে মৃতের স্বজনরা (ওয়ারিশ) আরো ৩ লাখ টাকা করে পাবে। তবে যেসব লাশের ওয়ারিশান জটিলতা ও বিদেশে ক্ষতিপূরণ আদায়ে মামলার জটিলতা দেখা দিচ্ছে ওই লাশগুলো দেশে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে ওমানে মারা যাওয়া সুনামগঞ্জের বাছিরের লাশ কী কারণে দেশে আসতে বিলম্ব হচ্ছে তা নিয়ে পরিবারের সদস্যরা হিসাব মিলাতে পারছেন না। উল্লেখ্য প্রতিবছর প্রবাসে দুই হাজারের বেশি শ্রমিক মারা যাচ্ছে। কখনো তারও বেশি মারা যাচ্ছে। এসব প্রবাসীর মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে ওই দেশ থেকে পাঠানো মেডিক্যাল রিপোর্টের বেশির ভাগে মৃত্যুর কারণে উল্লেখ থাকছে সড়ক দুঘটনা, হার্ট অ্যাটাক নতুবা ব্রেইন স্ট্রোক।



Most Read

2024-09-20 22:22:42